⏲ সকাল ১০:৩৯ সোমবার
📆 ৮ পৌষ, ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

শাহ্ মোহাম্মদ আরিফুল কাদের

কখনও নিজের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হলে মানুষের মুখে ফোটে পাপজাতীয় কথা। যদিও আল্লাহ তায়ালা সবসময় বান্দার জন্য চাহিদার দরজা খোলা রেখেছেন। সঙ্গে তার শুকরিয়া আদায়ের দরজাও খোলা থাকে। কিন্তু আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করলেই হবে না, প্রয়োজন তার ইবাদত-বন্দেগিতেও নিযুক্ত থাকা। আর এই ইবাদত করতে জমিনকে করে রেখেছেন মুসল্লা (নামাজের স্থান) হিসেবে। 

নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত বিধি মোতাবেক অবস্থানরত স্থানে ইবাদত করা বাধ্যতামূলক। সে জন্যই রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আর সারা পৃথিবীকে আমার জন্য মসজিদ (নামাজের জায়গা) এবং পবিত্রতার উপকরণ বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সুতরাং আমার উম্মতের মধ্যে যে ব্যক্তির নিকট যে কোনও স্থানে নামাজের সময় এসে উপস্থিত হবে, সে যেন সেখানেই নামাজ পড়ে নেয়।’ (সহিহ বোখারি, হাদিস : ৪৩৮)

অন্য হাদিসে আরও স্পষ্ট করে বর্ণনা করা হয়েছে যে, হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, কবরস্থান ও গোসলখানা ব্যতীত সব (পবিত্র) জায়গাই মসজিদ (সুনান ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭৪৫)।

উল্লিখিত হাদিস দুটির মর্মার্থে বলা যায়, দুনিয়ার জীবনে আল্লাহর নৈকট্য পাওয়ার লক্ষ্যে আবশ্যিক (ফরজ ও ওয়াজিব) ইবাদতের পাশাপাশি অন্যান্য ইবাদতের মাধ্যমে যখন যেখানে প্রয়োজন, ঠিক ওই সময়েই যদি মহান মুনিব আল্লাহকে কেউ ডাকে, সঙ্গে সঙ্গে তিনিও তার ডাকে সাড়া দেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, আমাকে ডাকো। আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেবো। নিশ্চয় অহংকারবশে যারা আমার ইবাদত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সূরা মুমিন, আয়াত : ৬০) 

নৈকট্য কিংবা বিপদে বালামুসিবতে স্বীয় অবস্থা শেয়ার করতে প্রয়োজন নিরিবিলি কোনও ইবাদতস্থল। কেননা, অনুনয় ও সংগোপনে ডাকার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের রবকে ডাকো অনুনয় বিনয় করে ও চুপিসারে।’ (সূরা আরাফ, আয়াত : ৫৫)

মুসলিম হিসেবে আমাদের ইবাদতযোগ্য নিরিবিলি স্থান মসজিদ। জাগতিক সব পেরেশানির ঊর্ধ্বে রয়েছে এই স্থান। স্বীয় বাড়িতে মসজিদের ন্যায় পরিবেশ খুব কম মানুষেরই হয়ে থাকে। ফলে যাবতীয় ইবাদত অধিকাংশ মানুষ মসজিদেই করতে ভালোবাসেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, অসাধুদের থেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হিফাজত রাখতে মসজিদ কর্তৃপক্ষ কোনো রকম জামায়াত শেষ করে মসজিদ তালাবদ্ধ করতে হয়। যার ফলে মসজিদমুখী অনেক মানুষ কষ্ট ও প্রভুর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হৃদয়ে চলে আসতে হয়। হয় না হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। অথচ মসজিদের সাথে নিজেদের আঁকড়ে রাখার নির্দেশও রয়েছে পবিত্র কুরআনুল কারিমে। ইরশাদ হচ্ছে, একমাত্র তারাই আল্লাহর মসজিদগুলো আবাদ করবে, যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ইমান রাখে, সালাত কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করে না। আশা করা যায়, ওরা হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে। (সূরা তওবা, আয়াত : ১৮) 

এই আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে মুমিন বান্দা আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্কের ব্যাপারে ইঙ্গিত দিচ্ছে। শুধু ইঙ্গিতেই শেষ হয়নি, বরং বান্দাকে আল্লাহর মেহমান বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

হাদিসে এসেছে, হজরত সালমান ফারসি রাযি. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, মসজিদে আগমনকারী ব্যক্তি আল্লাহর জিয়ারতকারী মেহমান। আর মেজবানের কর্তব্য হলো মেহমানের সম্মান করা। (তাবরানি ফিল কাবির ৬খণ্ড ২৫৩ পৃষ্ঠা, হাদিস : ৬১৩৯)

যাবতীয় কল্যাণের দিক রেখে দু’চারটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে চিহ্নিত করে জামায়াত পরবর্তী মসজিদে তালাবদ্ধতা ইবাদত শূন্যের লক্ষণ। কারণ, মসজিদ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ আসবাবপত্র গুছিয়ে রাখলেও তা নিরাপদ মনে হয় না। যদিও শহর এলাকায় এটার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে, যেন তা ছুরি হয়ে না যায়। কিন্তু মফস্বলে আলাদ জায়গা করার আর্থিক শক্তির বাইরে হয়ে যায়। ফলে জামায়াত পরবর্তী তালাবদ্ধ করায় ভালো মানুষগুলোও কষ্টে পড়তে হয়। অসাধুদের থেকে হিফাজত করতে মুমিনদের হৃদয়কে ঠান্ডা রাখতে যে-সব এলাকায় এসব পরিস্থিতির সম্ভাবনা থাকতে পারে বলে মনে হয়, সেসব এলাকায় মসজিদের আসবাবপত্র আলাদা রাখার ব্যবস্থা মাধ্যমে মসজিদমুখী করতে কর্তৃপক্ষের ভূমিকায় আমরা আশা রাখি। কিংবা মসজিদে সংযুক্ত এমন কোনও জায়গার ব্যবস্থা করা হোক, যেখানে পরবর্তী ওয়াক্তের পূর্ব পর্যন্ত মুসাফির, বিপদাপদে কষ্টে থাকা ব্যক্তি কিংবা নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদতে থাকা সম্ভব হবে। নিজের যাবতীয় কথা মহান শক্তিশালী আল্লাহকে বলে শান্তি পেতে পারি।

লেখক : গ্রন্থকার, আলেম ও গবেষক

মুআমু/

Muhurto 24 News
📆 আজ: সোমবার
🕐 সময় -সকাল ১০:৩৯ - (শীতকাল)
◘ ৮ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
◘ ২০ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ - হিজরী