⏲ সকাল ১০:৩৪ সোমবার
📆 ৮ পৌষ, ১৪৩১, ২০ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ , ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

মাওলানা শাহিদ আহমদ হাতিমী

আজ ১০ রামজান। শেষ হয়ে গেলো রহমতের দিনগুলো। আগামীকাল, রামজানের ২য় জুমুআবার। এই সেদিন যেনো স্বাগত জানালো রামজান এবং রহমতের দিন-রজনী। কিন্তু সময় কী আর ধরে রাখা যায়! শেষ হয়ে গেলো রহমতের দশক। কল্যাণের কাজে আসলে বিলম্ব করতে নেই। আগামীকাল থেকে মুসলিম উম্মাহকে স্বাগতম জানাবে মাগফিরাতের দশক। অর্থাৎ ১১ রামাজান থেকে ২০ রামাজান পর্যন্ত দিনগুলো মাগফিরাতের, যার অর্থ ক্ষমা। রহমতের দশকের শেষ দিনে আসুন মহান রবের রহমত অর্জনের জন্য নিজেকে সপে দেই। ঠিকমতো সিয়াম সাধনায় ব্রত হই।

রামজান মাসে মুমিন সুনিয়ন্ত্রিত পুণ্যময় জীবনে অভ্যস্ত হয় এবং বছরের অন্য মাসগুলো সে অনুযায়ী জীবন যাপন করে। সুতরাং রামজানে মুমিনগণ আল্লাহর আনুগত্য, পুণ্যের কাজ, ইবাদত ও আল্লাহর অবাধ্যতা পরিহারের অনুশীলন করে। সেই অনুশীলন হতে পারে উল্লেখিত সময়সূচি অনুযায়ী, কুরআন, হাদিস ও রাসুলুল্লাহ সা.-এর দৈনন্দিন জীবনের আলোকে যা সাজানো হয়েছে-

রামজানে মুমিনের রাত

১. মাগরিব নামাজের প্রস্তুতি : মাগরিবের আজানের উত্তর প্রদান ও জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়।

২. জিকির ও তাসবিহ পাঠ : হাদিসে উল্লেখিত সন্ধ্যার জিকির ও তাসবিহ পাঠ।

৩. পরিবারে দ্বীনচর্চা, পরিবারের সবার খোঁজখবর নেওয়া এবং সময় থাকলে দ্বিনি বিষয়ে আলোচনা করা অথবা কোনো বুজুর্গ আলেমের গ্রন্থ পাঠ করা। আল্লাহ বলেন, ‘তুমি উপদেশ দিতে থাকো। কেননা উপদেশ মুমিনদেরই উপকারে আসে।’

৪. এশার নামাজের প্রস্তুতি : রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি ঘরে পবিত্রতা অর্জন করে এবং পায়ে হেঁটে কোনো মসজিদে ফরজ নামাজ আদায়ের জন্য যায়, তাহলে তার এক পদক্ষেপে একটি পাপ মার্জনা হয় এবং অপর পদক্ষেপে একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।’ এশার আজানের উত্তর দেওয়া, জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় এবং এশার সুন্নাত নামাজ পড়া।

৫. জামাতের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় : মহানবী সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমামের সঙ্গে তারাবির নামাজ আদায় করে ঘরে ফেরে আল্লাহ তার জন্য পূর্ণ রাত নামাজ আদায় করার সওয়াব লিখে রাখেন।’

৬. তাহাজ্জুদ আদায় ও সাহরি খাওয়া : রমজানে তাহাজ্জুদ পড়ার বিশেষ সুযোগ থাকে। আর সাহরি খাওয়া সুন্নত। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘তোমরা সাহরি খাও। কেননা সাহরিতে বরকত রয়েছে।’

রামজানে মুমিনের সকাল

১. ফজরের আজানের উত্তর প্রদান : একজন মুমিনের দৈনন্দিন জীবন শুরু হয় ফজরের আজান শুনে। সে প্রথমেই আজানের উত্তর দেয় এবং আজানের দোয়া পাঠ করে। আজানের উত্তর প্রদানকারীর ব্যাপারে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘কিয়ামাতের দিন সে আমার সুপারিশ লাভ করবে।’

২. ফজরের সুন্নত : রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘ফজরের দুই রাকাত সুন্নত দুনিয়া ও তার মধ্যে যা আছে তা থেকে উত্তম।’

৩. জামাতে ফজর আদায় : রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘রাতের আঁধারে মসজিদে আগমনকারীদের কিয়ামতের দিন পূর্ণ আলো লাভের সুসংবাদ দাও।’

৪. জিকির ও তাসবিহ পাঠ : ফজরের নামাজের পর পুরুষরা মসজিদে এবং নারীরা জায়নামাজে বসে জিকির, তিলাওয়াত ও তাসবিহ পাঠ করবে। কেননা । রাসুলুল্লাহ সা. ফজর নামাজ শেষে সূর্য পরিপুর্ণ উদিত হওয়া পর্যন্ত চারজানু হয়ে স্বস্থানে বসে থাকতেন।’

৫. ইশরাক পড়া : মহানবী সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ জামাতে আদায় করে, তারপর সূর্য ওঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহর জিকির করে, এরপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করে যে, তার জন্য একটি হজ্জ ও একটি ওমরার সওয়াব রয়েছে।’

৬. দান করা : প্রতিদিন সকালে ফেরেশতারা দানকারীর জন্য দোয়া করে। তাই দানের মাধ্যমে দিন শুরু করা উত্তম। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন।’

রামজানে মুমিনের দুপুর

১. হালাল জীবিকার অনুন্ধান : কারো উপার্জন হারাম হলে রমজানে সে তা থেকে ফিরে আসার চেষ্টা করবে। রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি কাজের সন্ধানে পথ চলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন।’

২. জোহরের নামাজের প্রস্তুতি : জোহরের আজানের উত্তর দেওয়া, নামাজের প্রস্তুতি নেওয়া ও জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করা। 

৩. সুন্নাত নামাজে যত্নশীল হওয়া : । রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি দিনে ও রাতে ১২ রাকাত (সুন্নাত) নামাজ আদায় করে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন।’

৪. পারিবারিক কাজে সহযোগিতা : আয়েশা রা. বলেন, ‘নবী সা. জুতা ঠিক করতেন, কাপড় সেলাই করতেন এবং তোমরা যেমন ঘরে কাজ করো তেমনি কাজ করতেন।’

রামজানে মুমিনের বিকেল

১. আসরের নামাজের প্রস্তুতিতি : আসরের আজানের উত্তর প্রদান, নামাজের প্রস্তুতি ও মসজিদে জামাতের সঙ্গে আসরের নামাজ আদায়।

২. মসজিদে দ্বিনি মজলিসে অংশ নেওয়া : রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় শুধু কল্যাণকর বিষয় শেখা বা শেখানোর জন্য মসজিদে গেল সে একটি পূর্ণাঙ্গ হজের সওয়াব পাবে।’

৩. কোরআন তিলাওয়াত : আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘রামজান মাসের প্রতি রাতে জিবরাইল আ. রাসুলুল্লাহ সা. এর কাছে উপস্থিত হতেন এবং তাঁরা উভয়েই পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করে একে অপরকে শোনাতেন।’

৪. ইফতারের আগে দোয়া : ইফতারের আগে রোজাদারের দোয়া কবুল হয়। । রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না : ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যখন সে ইফতার করে এবং অত্যাচারিত ব্যক্তির দোয়া।’

৫. সাদাসিধে ইফতার : মহানবী সা. খুবই সাদাসিধে ইফতার পছন্দ করতেন। আবদুল্লাহ বিন আবি আউফ রা. থেকে বর্ণিত, ‘রোজায় আমরা রাসুল সা. এর সফরসঙ্গী ছিলাম। সূর্যাস্তের সময় তিনি একজনকে ডেকে বলেন, ছাতু ও পানি মিশিয়ে ইফতার পরিবেশন করো।’ (চলবে)

লেখক : জৈষ্ঠ সহ সম্পাদক, আজকের সিলেট ডটকম।

মুআমু/

Muhurto 24 News
📆 আজ: সোমবার
🕐 সময় -সকাল ১০:৩৪ - (শীতকাল)
◘ ৮ পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
◘ ২০ জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ - হিজরী