এরই মধ্যে সিলেট থেকে বৃটেনে গিয়ে যারা ১০ দিনের কোয়ারেন্টিন নিয়ম পালন করেছেন তাদের ‘তিক্ত’ অভিজ্ঞতার কারণেই বৃটেনমুখী হচ্ছেন না প্রবাসীরা। পাশাপাশি কোয়ারেন্টিন ব্যয়ও বাড়ানো হয়েছে।
একজন প্রবাসীকে একা হোটেলের রুমে থাকতে হলে প্রায় আড়াই লাখ টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। এই সময়ে অনেকেই কোয়ারেন্টিনে নিয়মিত স্বাস্থ্যসেবা নিয়েও জটিলতার মুখে পড়েন।
এদিকে বৃটেনে অবস্থানরত পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন করোনা ‘রেড জোন’ থেকে বাংলাদেশকে বের করতে বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডমিনিক রাবের সহযোগিতা চেয়েছেন। আটকে পড়া প্রবাসীরা জানিয়েছেন, করোনার গত দুই বছর সিলেটি প্রবাসীদের জন্য কখনোই সুখকর ছিল না।
প্রথম ধাপে করোনা বেড়ে গিয়েছিল বৃটেনে। ওই সময় অনেক প্রবাসী জরুরি কাজে সিলেটে এসে কোয়ারেন্টিন জটিলতায় নানা বিড়ম্বনার মুখে পড়েন। এই বিড়ম্বনায় বাংলাদেশে কেটেছে প্রায় দেড় বছর।
বাংলাদেশে কঠোর নিয়মের কারণে জরুরি প্রয়োজনে অনেক প্রবাসী দেশে যাতায়াত কমিয়ে দেন। এরপর বাংলাদেশে কোয়ারেন্টিন শিথিল করায় প্রবাসীরা নিজ এলাকা সিলেটে এসেছিলেন।
গত এপ্রিল থেকে বাংলাদেশে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার কারণে বাংলাদেশ থেকে বৃটেনগামী যাত্রীদের জন্য বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন নিয়ম চালু করে বৃটেন সরকার। এক সপ্তাহের সময় দিয়ে কোয়ারেন্টিন নিয়ম চালু করার কারণে অনেক প্রবাসী তখন বিমানের আসন সংকটের কারণে বৃটেন ঢুকতে পারেননি।
ফলে এপ্রিলের আগে জরুরি প্রয়োজনে দেশে আসা প্রায় ১০ হাজারের মতো বৃটেন প্রবাসী দেশেই আটকা পড়েন। এ কারণে যাত্রী সংকটের কারণে বিমান বাংলাদেশ সপ্তাহে একদিন লন্ডন রুটে তাদের ফ্লাইট চালু রাখে। পরবর্তীতে যাত্রী সুবিধা বিবেচনা করে দুটি ফ্লাইট চালু করেছে।
এখন সপ্তাহে রোববার ও বুধবার দুটি ফ্লাইট চালু আছে। কিন্তু ফ্লাইট চালু থাকলেও লন্ডন থেকে ফেরত আসা যাত্রী সংখ্যা বেশি থাকলেও লন্ডনগামী যাত্রী সংখ্যা কম। এর কারণ উল্লেখ করে সিলেটের কয়েকটি ট্র্যাভেলস এজেন্টের মালিকরা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, বৃটেনে এক ঘরে বন্দি থেকেই কোয়ারেন্টিন পালন করতে হয়। রুমের বাইরে বের হওয়া যায় না।
জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও সেটি মিলে না। এর বাইরেও রয়েছে পদে পদে ভোগান্তি। এ কারণে দেশে আটকে পড়া সিলেটের প্রায় ৬ হাজার প্রবাসী বৃটেন যাচ্ছেন না। তারা জানান, কোয়ারেন্টিনের জন্য একজন প্রবাসীকে ব্যয় করতে হয় প্রায় ২২৫০ পাউন্ড।
যদি দুই যাত্রী এক রুমে কোয়ারেন্টিন পালন করেন তাহলে তাদের জনপ্রতি ১৮৫০ পাউন্ড খরচ করতে হচ্ছে। দীর্ঘ দিন দেশে অবস্থানের কারণে অনেকেই আর্থিক দিক বিবেচনায়ও লন্ডন যেতে পারছেন না। এ ছাড়া, দেশে থাকা লন্ডন প্রবাসীদের বেলায় টিকা নিয়ে জটিলতাও ছিল।
অনেক প্রবাসী মডার্না কিংবা কোভিশিল্ডের টিকা নিতে পারেননি। আবার কেউ কেউ সিনোফার্মের টিকা নিয়েছেন। অনেকেই আবার ভ্যাক্সিনেটেড হতে পারেননি। ফলে এসব জটিলতার কারণেই প্রবাসীরা দেশে আটকা পড়েছেন। সিলেট শহরতলীর এয়ারপোর্ট এলাকার জমিলা খাতুন।
প্রায় দেড় বছর আগে এসেছিলেন সিলেটে। বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে কোয়ারেন্টিন ভয়ের কারণে তিনি বৃটেনে ফিরতে পারছেন না। ছেলেমেয়ে সবাই বৃটেনে। একা তিনি সিলেটের বাড়িতে পড়ে আছেন। ওসমানীনগর এলাকার লন্ডন ফেরত শানুর মিয়া দেশে এসেছেন। স্বজনের বিয়ের জন্য মাকে নিয়ে তিনি বাড়িতে এসেছিলেন।
এখন ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। ওখানে তার ব্যবসা-বাণিজ্য সব রেখে এসেছেন। কিন্তু কোয়ারেন্টিনের নানা ভোগান্তির কারণে বৃটেন ফিরতে সাহস পাচ্ছেন না। লন্ডনের বাসিন্দা আব্দুস সামাদ ও সিদ্দিক হোসেন জানিয়েছেন, জরুরি প্রয়োজনে অনেক প্রবাসী দেশে আসতে চাচ্ছেন। করোনা পরিস্থিতি ভালো হওয়ায় দুই বছরের নানা কাজ জমে আছে।
কিন্তু বৃটেনে কোয়ারেন্টিনের কঠোর নিয়মের কারণে অনেক প্রবাসী ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও সিলেটে আসছেন না। সিলেটের লতিফ ট্র্যাভেলসের পরিচালক জহিরুল হক শিরু গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, কোয়ারিন্টেনের কঠোর নিয়মের কারণে বিশেষ করে সেপ্টেম্বর সেশনে ভর্তির সুযোগ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থীও আটকা পড়েছেন সিলেটে।
তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে বৃটেনে ফেরার কথা। কিন্তু একজন শিক্ষার্থীকে নতুন করে আরও দুই থেকে তিন লাখ টাকা অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হচ্ছে। এ ছাড়া ভিজিট ভিসার যাত্রীরাও যেতে পারছেন না। তাদের আরও কঠোর নিয়মের মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
শিপার এয়ারওয়েজের স্বত্বাধিকারী খন্দকার শিপার আহমদ জানিয়েছেন, কঠোর কোয়ারেন্টিন নিয়মের কারণে যারা দেশে আটকে আছেন তারা অনেক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। কারও কারও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। অনেকের ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছে। আবার কেউ কেউ চাকরি নিয়েও শঙ্কায় পড়েছেন।
তিনি জানান, এখন যেহেতু করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে; এজন্য বৃটেনের প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিন নীতিমালা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। রেড জোন থেকে বাংলাদেশ বের হলেই প্রবাসীরা আগের মতো স্বাভাবিক নিয়মেই বৃটেন থেকে সিলেটে যাতায়াত করতে পারবেন।
সিলেটের যাত্রীক ট্র্যাভেলসের স্বত্বাধিকারী ও সিলেট চেম্বারের নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুর জব্বার জলিল জানিয়েছেন, যাত্রীদের ভয়েস ট্র্যাভেলস ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর জন্য আমাদের আরও সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।
কিন্তু আমরা সেটি করতে পারছি না। তবে- আমি মনে করি; পররাষ্ট্রমন্ত্রী যেহেতু আলোচনা করছেন, হয়তো সপ্তাহ-দশদিনের মধ্যে সুখবর আসতে পারে। করোনা পরিস্থিতি যেহেতু অনেকখানি সহনীয় পর্যায়ে এসেছে, এজন্য এখন রেড লিস্ট থেকে বাংলাদেশকে সরিয়ে নেয়া প্রয়োজন।
মুহুর্ত ২৪ | প্রজন্মের বার্তাবাহক
www.muhurto24.com
বিশ্বময় সবসময় সর্বশেষ খবর জানতে চোখ রাখুন।
সাহিত্য, উদ্ভাবন, প্রযুক্তি, সংবাদ সহ যেকোন বিষয়ে লেখা পাঠাতে পারেন এই ই-মেইলে [email protected]
Muhurto24 মুহুর্ত ২৪ (অনলাইন নিউজ সার্ভিস) © ২০২১ - ২০২৪