
মুহুর্ত নিউজ: ২০১৩ সালের ৫ মে, সারাদেশ থেকে ১৩ দফা দাবি নিয়ে মতিঝিলের শাপলা চত্তরে জড়ো হতে থাকে কওমি মাদ্রাসার লাখ লাখ ছাত্র ও শিক্ষকরা। একসময় কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় সমাবেশস্থল। হেফাজতে ইসলামের নেতাদের বক্তব্যে উত্তাল মতিঝিল সারাদিনব্যাপী উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে চলে সমাবেশ। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলেও দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সমাবেশস্থল ছাড়তে নারাজ উপস্থিত হেফাজতে ইসলামের কর্মী সমর্থকেরা। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বারবার তাদের সরে যাওয়ার জন্য মাইকে ঘোষণা দিতে থাকলেও নেতাকর্মীরা তাদের অবস্থান থেকে অনড় ভূমিকা পালন করে। রাত গভীর হয়ে আসে, ঘড়িতে তখন একটা বেজে ১৫ মিনিট। ততক্ষণে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের থেকে অপারেশন ফ্ল্যাশ আউটের নির্দেশনা চলে এসেছে।
হঠাৎ নিভে যায় আশেপাশের সব আলো। পুলিশ, র্যাব, বিজিবির সদস্যরা একযোগে ফাঁকাগুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ছুটতে থাকে। মুহূর্তেই এক ভীতিকর থমথমে পরিবেশের সৃষ্টি হয় পুরো এলাকা জুড়ে। দিক-বিধিক প্রাণভয়ে ছুটাছুটি করতে থাকে দিশেহারা জনতা। প্রাণভয়ে পলায়নরত জনতার উপর চলতে থাকে লাঠি চার্জ। সে রাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অপারেশন ফ্ল্যাশ আউটে ঠিক কতজন মানুষ হতাহত হয়েছিল, তার সঠিক তথ্য কোথাও পাওয়া যায়নি। শেখ হাসিনার নির্দেশেই সেদিনের হতাহতের ঘটনা ধামাচাপা দেয়া হয়েছিল বলে মনে করেন বিশিষ্ট জনেরা।
গত ১৪ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল থেকে ডিএমপি বরাবর পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, হেফাজতে ইসলাম আয়োজিত সমাবেশে সাবেক সরকারের বিভিন্ন বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও দলীয় সশস্ত্র ব্যক্তিরা পরিকল্পিতভাবে শাপলাচত্তর, মতিঝিল ও এর আশেপাশের এলাকায় বৈদ্যুতিক ব্ল্যাকআউট করে হেফাজত নেতাকর্মীদের উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। নেতাকর্মীদের উপর বিভিন্ন বাহিনীর পরিকল্পিত হত্যা, গণহত্যা ও গুমসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠিত হয়েছে বলে তদন্তে প্রকাশ পায়। আর এতেই ফেঁসে যাচ্ছেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা, সহ অন্তত শতাধিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তা।
হেফাজতে ইসলামের বিরুদ্ধে অপারেশনের দায়িত্বে থাকা ডিএমপির সেই সময়ের কমিশনার বেনজির আহমদ, সহ শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তার নাম, ঠিকানা, বিপি নম্বর ও পরিচয় জানতে চেয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল। এর মধ্যে দায়িত্বে থাকা সেই সময়ের ১০ জন পুলিশ কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন, ডিএমপির সেই সময়ের মতিঝিল বিভাগের এডিসি এসএম মেহেদী হাসান ও মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান, ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের এডিসি মাইনুল হাসান, রমনা বিভাগের এডিসি মনজুর রহমান ও আনোয়ার হোসেন, ডিসি খান মোহাম্মদ রেজোয়ান, লালবাগ বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ হারুন আর রশিদ, ডিবি পশ্চিমের এডিসি মশিউর রহমান ও ডিবি দক্ষিণের কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন খান।
এছাড়া সে সময় দায়িত্বে থাকা ডিএমপির সব অতিরিক্ত কমিশনার, যুগ্ন কমিশনার, ডিবির উপকমিশনার, ডিএমপির মতিঝিল, রমনা, ওয়ারি বিভাগের ডিসি, সহ সংশ্লিষ্ট এলাকার থানার ওসি, এসসি, এডিসি, সহ উর্ধতন কর্মকর্তাদের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
২০১৩ সালের পাঁচ ও ৬ মে, হেফাজতে ইসলামের কর্মী সমর্থকদের শাপলা চত্তর থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক। সেদিন অপারেশন পরিচালনার প্রধান দায়িত্ব পালন করেন, সে সময়ের ডিএমপি কমিশনার বেনজির আহমেদ ও র্যাবের কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান। তারা যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে, সেভাবেই মাঠে দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে সেখানে নিয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।
সূত্র: বাংলা ভিশন