মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, জেলার সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমেদ্বীন মাওলানা সৈয়দ মুজাদ্দিদ আলীর জানাযা শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টায় মৌলভীবাজার শাহ মোস্তফা রোডস্থ পৌর টাউন ঈদগাহ মাঠে সর্বস্তরের হাজার হাজার মুসল্লির উপস্থিতিতে সম্পন্ন হয়েছে। জানাযা শেষে মাওলানা মুজাদ্দিদ আলী (রহ.)-কে ‘মাক্ববারায়ে বর্ণভী’-তে দাফন করা হয়
বিশাল জানাযার নামাজে ইমামতি করেন বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড (বেফাক) এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আমীর শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক-পীর সাহেব বরুণা।
এদিকে জানাজার নামাজের নির্ধারিত সময়ের আগেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে খেলাফত মজলিসের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী, ভক্ত ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের আগমনে বিশাল ঈদগাহ মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
জানাজার নামাজের পূর্বে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বরুণার পীর, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ এর আমীর আল্লামা মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক বর্ণভী, দেশের বর্ষীয়ান আলেম ও ইসলামী চিন্তাবিদ, খেলাফত মজলিসের আমীর আল্লামা আব্দুল বাাসিত আজাদ, যুগ্ন মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মাওলানা শামছুজ্জামান চৌধুরী, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা আব্দুস সবুর, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আখলাক হোসেন, ইসলামিক ফাউন্ডেশন সিলেটের উপপরিচালক মাওলানা শাহ নজরুল ইসলাম, মৌলভীবাজার দারুল উলুম মাদরাসার মুুহতামিম ও শায়খুল হাদিস মুফতি শামছুজ্জোহা, মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মুফতি শামছুল ইসলাম, বানিয়াচং ফাজিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আবদাল হোসেন খান, বরুণা মাদরাসার নায়েবে সদরে মুহতামিম, আঞ্জুমানে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা শেখ নুরে আলম হামিদী, রাজনগর উপজেলা পরিষদের সাাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও নুরুল কুরআন মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আহমদ বেলাল, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা আলাউর রহমান টিপু, জামেয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা জামিল আহমদ আনসারী।
খেলাফত মজলিসের মৌলভীবাজার শহর সেক্রেটারি মাওলানা সৈয়দ সাইফুর রহমানের সঞ্চালনায় জানাপূর্ব আলোচনা সভায় আরও অংশ নেন মৌলভীবাজার সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান (ভিপি মিজান), মোস্তফাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম তাজ, মৌলভীবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আয়াছ আহমেদ, এটএন নিউজের জেলা প্রতিনিধি মহসিন পারভেজ প্রমুখ।
জানাজার নামাজে অংশ নেন খেলাফত মজলিসের বিভিন্ন শাখার নেতাকর্মী, বিএনপি, আল ইসলাহ, জমিয়ত, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এছাড়াও জানাযার নামাজে বিভিন্ন কওমি মাদরাসার মুহতামিম, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ইমাম-খতিবসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষজন।
মরহুমের জানাজার নামাজ শেষে শ্রীমঙ্গল উপজেলার বরুণা গ্রামের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান জামেয়া লুৎফিয়া আনোয়ারুল উলুম হামিদনগর বরুণা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে ‘মাক্ববারায়ে বর্ণভী’ তথা মরহুমের শ্বশুর বরুণার পীর শায়খুল হাদিস মাওলানা খলীলুর রহমান হামিদীর কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মাওলানা সৈয়দ মুজাদ্দিদ আলী (রহ.) ছিলেন, জেলার শীর্ষ আলেম ও বরুনার পীর শায়খুল হাদিস মরহুম মাওলানা খলিলুর রহমান হামিদী (রহ.) এর জামাতা। ৬ ভাই আর এক বোনের মধ্যে সৈয়দ মুজাদ্দিদ আলী ভাইদের মধ্যে তৃতীয়। তিনি মৌলভীবাজার শহরের ধরকাপন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।
গতকাল ২৯ মার্চ (শুক্রবার) সকাল ৬টায় রাজধানী ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন।
মরহুম মুজাদ্দিদ আলী দীর্ঘদিন ধরে ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। প্রায় ৮ মাস পূর্বে তার শরীরে ধরা পড়ে মরণব্যাধি ক্যান্সার। এর পর মৌলভীবাজার ও ঢাকার হাসপাতালে চলে নানা চিকিৎসা। সর্বশেষ শরীরের অবস্থার অবনতি হলে পরিবারের সদস্যরা ভর্তি করান ঢাকার সিএমএইচ হাসপাতালে।
৬ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে মুজাদ্দিদ আলী তৃতীয়। তিনি মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি মরহুম সৈয়দ মোস্তাকিম আলী, আওয়ামী লীগ নেতা ও পরিবহন মালিক সমিতির সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম সৈয়দ মুফসিল আলীর ভাই।
পারিবারিক জীবনে তিনি ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক। তার বড় ছেলে মাওলানা সৈয়দ আতহার জাকওয়ান বরুণা মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করছেন। ২ মেয়ে পারিবারিকভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন।
মরহুম মাওলানা মুজাদ্দিদ আলী আশির দশকে দেশের শীর্ষ দ্বীনি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস (টাইটেল) সম্পন্ন করেন। ১৯৯০ সালে জেলা শহরে প্রতিষ্ঠিত অন্যতম ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসা জামেয়া দ্বীনিয়ার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও মুতাওয়াল্লী ছিলেন।
রাজনৈতিক সচেতন একজন দল পাগল মানুষ হিসেবে দীর্ঘ সময় রাজপথ ও দলীয় অঙ্গনে ভূমিকা রাখায় ২০২৩-২৪ সেশনের জন্য খেলাফত মজলিসের জেলা সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন। এর আগে দলটির শহর সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
মরহুমের মৃত্যুতে পরিবার, আলেম সমাজ, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক দলসহ দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
মরহুমের মৃত্যুতে ইসলামী রাজনৈতিক অঙ্গনে অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তাঁর মতো সাদামনের মুখলিছ আলেম এ জগতে বিরল।
শেয়ার করুন
- Click to share on Facebook (Opens in new window)
- Click to print (Opens in new window)
- Click to share on WhatsApp (Opens in new window)
- Click to email a link to a friend (Opens in new window)
- Click to share on LinkedIn (Opens in new window)
- Click to share on Twitter (Opens in new window)
- Click to share on X (Opens in new window)